এবং ইনকুইজিশন – Akkhor.xyz

বইটিতে চারটি কাহিনী আছে। বেশ বড় – বড় আকারের কাহিনী। আজকালকার পত্রিকাগৃহের ভাষায় মিনিমাম ‘নভেলা’ বলাই চলে। ঠগিদের কথা বাংলা পাঠকেরা অনেকেই জানেন। সেই ঠগিদের নিয়েই অভীক লিখেছেন তাঁর প্রথম অতিপ্রাকৃত কাহিনী “শোধ”। সুন্দরভাবে টেনে এনেছেন প্রায় কিংবদন্তীসম নায়ক স্লীম্যানকে। ভারতের ইতিহাস থেকে ছেঁকে তুলে এনেছেন নির্ভুল তথ্য। কোথাও মনে হয় না পান্ডিত্য ভর করে আছে লেখকের কলমে অথচ পড়লেই মনে হয় লেখকের চর্চা অতুলনীয়। ভয় জেঁকে বসে তন্ত্রসাধনার মারণ – উচাটনের দ্বারা। কেউ প্রথম গল্প হিসাবে এত সাংঘাতিক বিবরণ দিতে পারেন এটা ভাবাই কঠিন। আমরা বাঙালিরা তন্ত্র, তান্ত্রিক ইত্যাদি শুনলে যা বুঝি সেই ধারণাকে নস্যাৎ করে তন্ত্রের আগমনের ইতিহাসের সুতোয় জাল বুনেছেন লেখক ২য় গল্পে। পালরাজাদের সময়কালের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহু বছর ধরে ঘটে আসা এক অমোঘ অভিশাপ। একটি পরিবারের কাছে আছে একটি ফলক। সেই ফলক কারও জীবনে আনবে মৃত্যু। কিন্তু কার? কীভাবে নিয়তি তাকে বাধ্য করবে? একটা চক্র পূর্ণ হবার অপেক্ষায় আছেন মহাকাল। ৩য় গল্পটি একটি সুপারন্যচারাল থ্রিলার। ডামরী নামক অপদেবী কীভাবে গ্রাস করতে আরম্ভ করে এক ব্যক্তিকে তা যে ভয়াল পরিবেশ বিবরনের মধ্যে দিয়ে লে খক তুলে ধরেছেন সেই নিয়ে যা-ই বলব, মনে হবে কম হয়ে গেল। ৪র্থ গল্পটি হল একটি আন্তর্জাতিক মানের লেখা, অসাধারণ ভাষাশৈলীর লেখা, দুর্দান্ত রিসার্চ বেসড লেখা। বেতালকে নিয়েই একটি অদ্ভুত ভয়াল কাহিনী ফেঁদেছেন লেখক। বেতাল এখানে রুদ্রের সহচর গোত্রের। বেতাল মন্দিরের পূজারীর উপরে নেমে আসে ইনকুইজিটরের কোপ। কিন্তু সেটা কি কেবলই ইনকুইজিশন ফলাতে? নাকি তার পিছনে ছিল কোনও গূঢ় রহস্য? কীসের অন্বেষণ? গল্পটাকে প্যারালাল ভাবে কয়েকটা কালখণ্ডে খেলিয়েছেন লেখক। কালাশ জনজাতির আফগান এলাকা, আইসল্যান্ড, পর্তুগাল, ভারত …. কিন্তু জগাখিচুড়ি নয় স্তরে – স্তরে সাজানো বিরিয়ানির মতই সুস্বাদু লেখা। কখন যে গল্পটা ভয়ের গ্রাসরূপী কৃষ্ণশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার আকুল বেদনাগাথা হয়ে ওঠে তা বোঝাই যায় না।