গালিভার্স ট্র্যাভেলস, কপালকুণ্ডলা, গরিলা শিকারী – Akkhor.xyz

গালিভার্স ট্র্যাভেলস
পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে ডুবে গেল জাহাজ। ক্লান্ত গালিভার কোনমতে ডাঙায় পৌছে বন্দি হলো খুদে লিলিপুটদের হাতে। পরবর্তী যাত্রায় নিজেই লিলিপুট হয়ে ধরা পড়ল ব্ৰবডিঙন্যাগে। বিচিত্র অভিজ্ঞতা।

 

কপালকুণ্ডলা
নবকুমারের কানে কানে বলে গেল অপরূপা-পালাও! জানো না, নরমাংস না হলে পূজা হয় না তান্ত্রিকের?’

 

গরিলা শিকারী
প্রবাল দ্বীপের তিন কিশোর দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর একসঙ্গে আফ্রিকার গহীনতম অঞ্চলে গরিলা শিকারের জন্য পৌছল । ঘটনাচক্রে দেখা হয়ে গেল এক দাস ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারপর…

Weight 0.155 kg
Dimensions 1.27 × 12.7 × 17.78 cm
Binding Type

Specification

Title জেন আয়ার লিটল উইমেন ভ্যানিটি ফেয়ার
Author
Translator
Publisher
ISBN
Edition Reprinted, 2015
Number of Pages 264
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

Author

জোনাথন সুইফট

১৬৬৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ শে নভেম্বর আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে জোনাথন সুইফট জন্মগ্রহণ করেন। পিতারও নাম জোনাথন সুইফট। পিতার মৃত্যুর কয়েক মাস পরে পুত্র জোনাথন সুইফট জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না, শুধু জানা যায় যে তাঁর নাম ছিল রেভারেন্ড টমাস। সুইফট ধর্মযাজক ছিলেন কিন্তু ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসের সমর্থক ছিলেন বলে তিনি নিপীড়িত হয়ে দেশ ত্যাগ করে আয়ারল্যান্ডে এসে বসবাস করতে আরম্ভ করেন। আয়ারল্যান্ডে এসে তিনি ইংল্যান্ডের লিস্টার জেলার মেয়ে অ্যাবিগেল এরিককে বিয়ে করেন। স্বামী মারা যাবার পর অ্যাবিগেল খুব দুর্দশায় পড়েছিলেন। ছোটো জোনাথন সুইফটকে তার ধাইমা ইংল্যান্ডে নিয়ে যায়। সেখানে হোয়াই হ্যাভেন গ্রামে কিছুকাল বসবাস করার পর জোনাথনের বয়স চার বৎসর হলে তার ধাইমা তাকে আবার আয়ারল্যান্ডে ফিরিয়ে এনে তার চাচা গডউইন সুইফটের জিম্মা করে দেয়। জোনাথনকে চাচা কিলকেনিতে স্কুলে পড়তে পাঠান। চৌদ্দ বছর বয়সে জোনাথন ডাবলিনে ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোদিনই তাঁর সুনাম ছিল না। ১৬৮৫ সালে বিশেষ গ্রেস নম্বর পেয়ে তিনি কোনোরকমে ডিগ্রি লাভ করেন। ১৬৮৮ পর্যন্ত জোনাথন ট্রিনিটি কলেজে ছিলেন তারপর লিস্টারে গিয়ে মায়ের সঙ্গে কিছুদিন (১৬৮৯) বাস করেছিলেন। তারপর ফার্নহ্যামের কাছে খুর পার্কে স্যার উইলিয়ম টেম্পল নামে কূটনীতিকের সেক্রেটারির চাকরি পান। ভদ্রলোকের সাহিত্যিক হিসাবে কিছু খ্যাতি ছিল। মাঝে দু’বার বিরতি ব্যতীত (১৬৯০-৯১) আয়ারল্যান্ডে গিয়েছিলেন ‘হোলি অর্ডার’ গ্রহণ করতে এবং ১৬৯৪-৯৫ সাল প্রায় পনের মাস বেলফাস্টের কাছে কিলরুট এ ছিলেন। তিনি ১৬৯৯ পর্যন্ত খুর পার্কে ছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত মিঃ টেম্পলের দক্ষিণ হস্ত রূপে বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। কর্মসূত্রে তাঁকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হত (ফলে কলেজে শিক্ষার ঘাটতি পূরণ হয়ে গিয়েছিল) এবং বহু বিশিষ্ট ব্যক্তির সংস্পর্শে (রাজা তৃতীয় উইলিয়ম অন্যতম) আসতে হয়েছিল যার ফলে তিনি রাজনীতি ও সামাজিক ব্যাপারে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। এই খুর পার্কেই তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল এসথার জনসনের সঙ্গেÑ বলা হয় উনি নাকি স্যার উইলিয়াম টেম্পলের অবৈধ কন্যাÑ যিনি তাঁর জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে ছিলেন। এসথারই হল সুইফট-এর ‘জর্নাল’-এর স্টেলা। তাঁদের প্রথম সাক্ষাতের সময় এসথারের বয়স ছিল আট বছর এবং সুইফট এর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল শিক্ষক ও ছাত্রীর। কাব্যরচনা নিয়ে সুইফট-এর সাহিত্যজীবন শুরু এবং গোড়ার দিকের তিনটি দীর্ঘ রচনা তাঁর কাব্য সংকলনে স্থান পেয়েছে। গালিভারস ট্রাভেলস বাদ দিলে তিনি সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত বিদ্রƒপাত্মক রচনা ‘এ টেল অফ এ টাব’ ১৬৯৭-৯৯ সালে লেখেন। এই সময়েই তিনি আরো দুটি ছোটো রচনা ‘ব্যাটল অফ দি বুকস্’ এবং ‘মেকানিক্যাল অপারেশন অফ দি স্পিরিট’ লেখেন। এই তিনটি বই একত্রে ১৭০৪ সালে প্রকাশিত হয়। ১৬৯৯ সালে স্যার টেম্পল মারা যান। সুইফটের নামে কিছু সম্পত্তি এবং তাঁর স্মৃতিকথা ‘মেময়ারস’ বিক্রির লভ্যাংশও উইল করে যান। ঐ বছরেই হেমন্তকালে সুইফট আয়ারল্যান্ডের অন্যথম লর্ড জাস্টিস আর্ল অফ বার্কলের পারিবারিক পাদ্রী নিযুক্ত হন। তাঁরই আনুকূল্যে যথাসময়ে ডাবলিনের কাছে লারাকর গ্রামবাসীদের এবং সেন্ট প্যাট্রিকস ক্যাথিড্রাল থেকে সুইফট খ্রিস্টিয় ধর্ম পালন বাবদ নিয়মিত উপস্বত্ত্বের অধিকারী হন। প্রথমে তিনি ‘ডাবলিন ক্যাসল’-এ যেয়ে বাস করতে থাকেন এবং পরে লারাকর গ্রামের ধর্মযাজকের জন্যে নির্দিষ্ট বাসায় উঠে যান এবং সেখানে তিনি কিছুকাল সাধারণ পাদ্রী হিসাবে বাস করেন। তিনি প্রায়ই ডাবলিন যেতেন এবং ওখান থেকে তিনি ডক্টর অফ ডিভিনিটি ডিগ্রী লাভ করেন ও অচিরে একজন খ্যাতনামা ব্যক্তিরূপে পরিচিত হন। ১৭০১ সালে এসথার জনসনের (স্টেলা) বয়স যখন কুড়ি তখন সে এবং তাঁর বান্ধবী রেবেকা ডিংলে লারাকরের কাছে বাস করতে আসেন এবং এই সময় থেকে সুইফট ও ‘স্টেলা’র মধ্যে এমন একটি মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে যা তাঁরা অব্যাহত রেখেছিলেন। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে সুইফট একেবারেই অনিচ্ছুক ছিলেন। অবশ্য এই অনিচ্ছুকতার সমর্থনে সুইফটের যুক্তি থাকলেও তার মানসিক গঠনও ছিল বিবাহের বিরুদ্ধে। সুইফট নানারকম মানসিক বৈকল্যতে ভুগতেন তাঁর উপর সাময়িক বধিরতা, মাথাঘোরা এবং বমনেচ্ছায় ভুগতেন, বর্তমানে যে রোগকে মেনিয়ারাস ডিজিজ বলা হয় সেই রোগ আর কি। ১৭০১ থেকে ১৭০৪-এর মধ্যে সুইফট কয়েকবার লিস্টার এবং লন্ডনে গিয়েছিলেন এবং অ্যাডিসন, পোপ ও স্টিল-এর বন্ধুত্ব লাভ করেন। তাঁর লন্ডন পর্যায় (লন্ডন পিরিয়ড) আরম্ভ হয় ১৭০৭ সালে। এই বছর সরকারি চার্চ মিশনে তাঁকে ইংল্যান্ডে পাঠান হয়েছিল। তিনি তাঁর অভীষ্ট কাজ শেষ করেন নি। যা হোক তাঁর অনেক বন্ধু জুটেছিল এবং রসিক ব্যক্তি ও ‘এটেল অফ এ টাব’ গ্রন্থে রচয়িতা রূপে প্রচুর খ্যাতি লাভ করেন। লন্ডনে বাস করবার সময় তিনি চার্চ সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন নিয়ে ককেখানি পুস্তিকা এবং ১৭০৯ সালে তিনি আয়ারল্যান্ডে ফিরে আসেন কিন্তু পরের বছরেই হেমন্তে তাঁকে আবার লন্ডনে ফেরত পাঠান হয়। এই দ্বিতীয়বার লন্ডনে থাকবার সময় তিনি প্রবল রাজনীতির আবর্তে জড়িয়ে পড়েন এবং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ গ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি ছিলেন ‘হুইগ’ দলে পরে ‘টোরি’ দলে চলে গিয়ে ‘একজামিনার’ পত্রিকায় (ভাইকাউন্ট বলিংব্রুক প্রতিষ্ঠিত সাময়িক পত্রিকা) প্রবন্ধ এবং কয়েকটি পুস্তিকা যথা ‘দি কন্ডাক্ট অফ দি অ্যালিজ’ (১৭১১) এবং ‘দি পাবলিক স্পিরিট অফ দি হুইগম’ মারফত টোরিদলকে আক্রমণ করতে থাকেন। প্রথমোক্ত পুস্তিকাটি রাজনৈতিক প্রচার কৌশলের মধ্যে সর্বকালের তীক্ষèতম পুস্তিকা হিসেবে স্বীকৃত। জনমতের উপর পুস্তিকাটি প্রবল প্রভাব বিস্তার করে ফলে স্পেনের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যুদ্ধ থেকে ইংল্যান্ড সরে আসে এবং ১৭১৩ সালে ইন্ট্রেক্ট শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। খ্রিস্টান ধর্ম সম্বন্ধে অগাধ পা-িত্য এবং সরকারের অনুকূলে প্রচুর কাজ করা সত্ত্বেও সুইফট কিন্তু ইংল্যান্ডের ডীন পদবী এমন কি বিশপের মর্যাদা লাভ করতে পারেন নি। যদিও তা পাওয়া তাঁর পক্ষে উচিত ছিল। যা হোক ১৭১৩ সালে তাঁকে কিছু স্বীকৃতি দেওয়া হয়, লর্ড অক্সফোর্ডের চেষ্টায় তাঁকে ডাবলিনের সেন্ট প্যাট্রিকস চার্চের ডীন-এর মর্যাদা দেওয়া হয়। পরের বছর কুইন অ্যান-এর মৃত্যু হয় এবং হুইগ দল মন্ত্রীত্ব গঠন করে। এর অর্থ লন্ডনে সুইফটের রাজনৈতিক প্রভাবের অবসান এবং সেই সঙ্গে তাঁর সকল আশা আকাক্সক্ষা মৃত্যু। ইংল্যান্ড ছিল তাঁর আধ্যাত্ম ও চিন্তা শক্তি বিকাশের বাসভুমি আর আয়ারল্যান্ডে ফিরে আসা মানে নির্বাসনে যাওয়া। ইংল্যান্ডে থাকাকালিন সুইফট এসথার জনসনকে পরপর অনেক চিঠি লিখেছিলেন অধিকাংশই দিনলিপি হিসেবে। এই চিলি লেখার কাল ছিল ১৭১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৭১৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। এই চিঠিগুলো বই আকারে ‘জর্নাল টু স্টেলা’ নামে প্রকাশিত হয়ে রসিক সমাজের প্রশংসা অর্জন করেছিল। ইংল্যান্ডে থাকবার সময় সুইফট আর একটি যুবতীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিলেন। তারও প্রথম নাম এসথার, এসথার ভ্যানো¤্রাই (ভ্যানেসা)। এই যুবতীটিকেও সুইফট অনেক চিঠি লিখেছিল এবং ‘ক্যাডিনাম অ্যান্ড ভ্যানেসা’ নামে একটি কবিতাও লিখেছিলেন। ‘ভ্যানেসা’ প্রবলভাবে সুইফটের প্রেমে পড়েছিল এবং তাঁর সঙ্গে আয়ারল্যান্ডেও গিয়েছিল। ‘স্টেলা’ এবং ‘ভ্যানেসা’ ডাবলিনে বা কাছেই বাস করত কিন্তু পরস্পরের অস্তিত্ব জানত না। এই দুই মহিলার সঙ্গে সুইফটের সম্পর্ক সাধারণ বন্ধুত্ব অপেক্ষা প্রগাঢ় ছিল তবু সুইফট নাকি একে প্রেম বলতেন না। সুইফট সম্ভবত ‘স্টেলা’কে গোপনে বিবাহ করেছিলেন কিন্তু তার সঙ্গে কখনো একত্রে বাস করেন নি। ১৭২৩ সালে ‘ভ্যানেসা’ মারা যায় আর ‘স্টেলা’ পাঁচ বছর পরে। সেন্ট প্যাট্রিকের ডীন হিসেবে এবং কয়েকজন বন্ধু পরিবত হয়ে সুইফট তাঁর অবসর জীবন যাপন করতেন। আয়ারলান্ডের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে সুইফট তাঁর প্রচুর ক্ষমতা ব্যয় করেছিলেন যার ফলে অসাধারণ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তাঁর লিখিত “ড্রেপিয়ারস লেটার” আয়ারল্যান্ডে ‘উডস হাফ পেন্স’-এর প্রচলন বন্ধ করেছিল যার জন্যে তিনি জাতীয় বীরের সম্মান অর্জন করেছিলেন। এরপর থেকে আইরিশদের কাছে তিনি শুধুই ‘দি ডীন’ নামে পরিচিত হতেন। ‘গালিভারস্ ট্রাভেলস্’ প্রকাশের জন্যে তিনি ১৭২৬ সালে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন যা তিনি পাঁচ বছর আগে লিখিতে আরম্ভ করেছিলেন। এই একমাত্র বই যা লিখে তিনি প্রকাশকের কাছ থেকে অর্থ পেয়েছিলেন (২০০ পাইন্ড)। বই প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাফল্য। ১৭২৭ সালে তিনি আবার ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। পোপের কাছে থাকতেন, আগেও তাই থাকতেন। পরের বছরে স্টেলা মারা যায়। এরপর কয়েক বছর সুইফটের জীবন অপরিবর্তিতভাবে চলতে থাকে। অনেক কবিতা লিখতেন এবং চার্চ ও আইরিশ সমস্যা নিয়ে প্রচারপত্রও লিখতেন। ইংল্যান্ডে বন্ধুদের নিয়মিত চিঠি লিখতেন এবং তাদের গ্রামের বাড়িতে যাওয়া আসাও করতেন। ক্রমশ দৈহিক পীড়ায় তিনি জর্জরিত হয়ে পড়েন ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, অসামাজিক হয়ে পড়েন, অদ্ভুত সব চিন্তা করতেন এবং মাঝে মাঝে দপ করে রেগে উঠতেন। তাঁর ভয় ছিল তিনি বুঝি উন্মাদ হয়ে যাবেন এবং তাই হয়েছিলেন, তবে তখন তাঁর শরীর একেবারেই ভেঙে পড়েছিল। ১৭৪৫ সালের ১৯ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। সেন্ট প্যাট্রিক ক্যাথিড্রালে তাঁকে কবর দেওয়া হয়। কবরের ওপরে স্মৃতিস্তম্ভে যে কথাগুলো উৎকীর্ণ আছে তা তিনি নিজেই লিখে রেখে গিয়েছিলেন।

 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় – Bankimchandra Chattapadhyaya

Bankimchandra Chattapadhyaya- জন্ম হয় বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তারিখ ২৬ জুন, ১৮৩৮ অর্থাৎ ১৩ আষাঢ় ১২৪৫। চট্টোপাধ্যায়দের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রপিতামহ রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সম্পত্তি পেয়ে কাঁঠালপাড়ায় আসেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। রামহরির পৌত্র যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় পুত্র বঙ্কিমচন্দ্র। বঙ্কিমের পূর্বে তাঁর আরও দুই পুত্র জন্মান – শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমের জন্মকালে তিনি সদ্য অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি কালেক্টর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। জন্মের পর ছয় বছর বঙ্কিমচন্দ্র কাঁটালপাড়াতেই অতিবাহিত করেন। পাঁচ বছর বয়সে কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়। শিশু বয়সেই তাঁর অসামান্য মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। বঙ্কিমের কণিষ্ঠ সহোদর পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “শুনিয়াছি বঙ্কিমচন্দ্র একদিনে বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করিয়াছিলেন।” যদিও গ্রামের পাঠশালায় বঙ্কিম কোনওদিনই যান নি। পাঠশালার গুরুমশাই রামপ্রাণ সরকার বাড়িতে তাঁর গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হন। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা থেকে মনে হয় তিনি রামপ্রাণের শিক্ষা থেকে বিশেষ উপকৃত হন নি। তিনি লিখেছেন, “সৌভাগ্যক্রমে আমরা আট দশ মাসে এই মহাত্মার হস্ত হইতে মুক্তিলাভ করিয়া মেদিনীপুর গেলাম।” ১৮৪৪ সালে বঙ্কিমচন্দ্র পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে আনীত হলে, সেখানেই তাঁর প্রকৃত শিক্ষার সূচনা হয়। মেদিনীপুরের ইংরেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনৈক এফ টিডের পরামর্শে যাদবচন্দ্র শিশু বঙ্কিমকে তাঁর স্কুলে ভর্তি করে দেন। এখানেও বঙ্কিম অল্পকালের মধ্যেই নিজ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। পূর্ণচন্দ্রের রচনা থেকে জানা যায়, বার্ষিক পরীক্ষার ফলে সন্তুষ্ট হয়ে টিড সাহেব বঙ্কিমকে ডবল প্রমোশন দিতে উদ্যত হলে যাদবচন্দ্রের হস্তক্ষেপে তিনি নিরস্ত হন। ১৮৪৭ সালে টিড ঢাকায় বদলি হয়ে গেলে সিনক্লেয়ার তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন; তাঁর কাছেও বঙ্কিম প্রায় দেড় বছর ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৮৪৯ সালে বঙ্কিমচন্দ্র পুনরায় কাঁটালপাড়ায় ফিরে আসেন। এইসময় কাঁটালপাড়ার শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের কাছে বঙ্কিম বাংলা ও সংস্কৃতের পাঠ নেন। বঙ্কিমচন্দ্র খুব ভালো আবৃত্তিকারও ছিলেন। সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জন নামক সংবাদপত্রে প্রকাশিত বহু কবিতা তিনি এই বয়সেই কণ্ঠস্থ করে ফেলেন। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর বিরচিত বিদ্যাসুন্দর কাব্য থেকে বিদ্যার রূপবর্ণন ও জয়দেব প্রণীত গীতগোবিন্দম্ কাব্য থেকে ধীরে সমীরে যমুনাতীরে কবিতাদুটি তিনি প্রায়শই আবৃত্তি করতেন। এছাড়াও পণ্ডিত হলধর তর্কচূড়ামণির কাছে এই সময় তিনি মহাভারত শ্রবণ করতেন। হলধরই তাঁকে শিক্ষা দেন – “শ্রীকৃষ্ণ আদর্শ পুরুষ ও আদর্শ চরিত্র”। এই শিক্ষা তাঁর পরবর্তী জীবনে রচিত নানা রচনাতে প্রতিফলিত হয়েছিল। কিছুকাল পরে ১৮৪৯ সালে হুগলি কলেজে ভর্তি হন। এখানে তিনি সাত বছর পড়াশোনা করেন। হুগলি কলেজ পড়াকালীন ১৮৫৩ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বছরেই সংবাদ প্রভাকরে কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কুড়ি টাকা পুরস্কার লাভ করেন। হুগলি কলেজ অধ্যয়নকালেই বঙ্কিমচন্দ্র কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জনে গদ্য-পদ্য রচনা আরম্ভ করেন। পরবর্তীকালে তাঁর বহু রচনা এই দুই কাগজে প্রকাশিত হয়। হুগলি কলেজ ১৮৫৬ সালে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সব বিষয়ে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে তিনি দুই বছরের জন্য কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বছরই তিনি হুগলি কলেজ ছেড়ে আইন পড়বার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৫৭ সালে জানুয়ারী মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রবর্তন করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরের বছর ১৮৫৮ সালে প্রথমবারের মতো বি.এ. পরীক্ষা নেওয়া হয়। মোট দশজন ছাত্র প্রথমবারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উত্তীর্ণ হয়েছিলেন কেবলমাত্র বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু। তার বাবার মতো তিনিও সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্‌টার পদে। সারা জীবন তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যান। স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে দুটি খেতাবে ভূষিত করে – ১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে কম্প্যানিয়ন অফ দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার খেতাব। তবে সরকারি কর্মকর্তা নয় বরং লেখক এবং হিন্দু পুনর্জাগরণের দার্শনিক হিসেবেই তিনি অধিক প্রখ্যাত। শেষ জীবনে তাঁর স্বাস্থ্য বিশেষ ভালো ছিল না। ১৮৯৪ সালের মার্চ মাসে তাঁর বহুমূত্র রোগ বেশ বেড়ে যায়। এই রোগেই অবশেষে তাঁর মৃত্যু হয়, এপ্রিল ৮, ১৮৯৪ (বাংলা ২৬ চৈত্র ১৩০০ সাল)

 

Robert Michael Ballantyne – রবার্ট মাইকেল ব্যালান্টাইন

Translator

কাজী শাহনূর হোসেন, নিয়াজ মোরশেদ

 

 

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “গালিভার্স ট্র্যাভেলস, কপালকুণ্ডলা, গরিলা শিকারী”

Your email address will not be published.